সিলেটে টিলাকাটার বিরোধে প্রাণ হারালেন আশিক, মামলা নিয়ে লুকোচুরি
সিলেট প্রতিনিধি:
সিলেটে টিলাকাটার বিরোধে প্রাণ হারালেন আশিক, মামলা নিয়ে লুকোচুরি। সিলেট সদর উপজেলার শাহপরান এলাকার পীরের চক কিশোরীগুল স্কুলটুলা নামক স্থানে অবৈধ ভাবে মাটি কাটায় স্থানীয় এক বাসিন্দা বাধা দিলে-মাটিখেকো চক্রের হামলায় বাধা প্রধানকারীর আশিক মিয়া ঘটনাস্থলেই নিহত হোন।
গত রোববার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আশিক মিয়া (৩৪) পীরেরচক কিশোরীগুল স্কুলটুলা গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে।
জানা গেছে, পীরের চক এলাকায় অবৈধভাবে মাটি কাটা নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় আশিকের।
একপর্যায়ে মাটি কাটার মেশিন দিয়ে আশিকের বুকে সজোরে আঘাত করে মাটি খেকো চক্র। আঘাতে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয়রা দ্রুত তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত আশিক মিয়ার স্ত্রীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান – এই হত্যাকান্ডের সাথে নিজেকে পুলিশ সদস্য পরিচয়দানকারী খোরশেদ, নামধারী সাংবাদিক রায়হান, জনি ও সার্জন নামের যুবক জড়িত রয়েছে।
নিহতের স্ত্রীর ও স্থানীয় এলাকাবাসী কয়েকজন জানান সাংবাদিক নামধারী রায়হান হোসেন মান্না, ও জনি মিয়া পাহাড় কাটার সাথে জড়িত রয়েছে, তাদের সেল্টারে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এই চক্র এবং তারা পুলিশ ম্যানেজ করে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেকে।
এদিকে গতকাল ২০/০৩/২৩ তারিখ বাদ আসর জানাজার পর শাহ্ মানিকপীর রহঃ মাজারে নিহত আশিক মিয়ার দাফন সম্পুর্ন হয়। নিহতের স্ত্রী কবিতা জানান সাড়ে চার বছরের একটি সন্তান রয়েছে তাদের এবং তিনি ৮ মাসের অন্ত সত্তা।
কবিতা দাবী করেন- অবৈধভাবে টিলার মাটি কাটতে বাধা দেওয়ায় এই চক্র পরিককল্পিত ভাবে তার স্বামীকে হত্যা করেছে। তিনি আসামীদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে কঠোর শাস্তির দাবী জানান।
অবাধে কাটা হচ্ছে পাহাড় ও টিলা পরিবেশ অধিদপ্তর ঘুমে।
সিলেটে টিলাকাটার বিরোধে প্রাণ হারালেন আশিক, মামলা নিয়ে লুকোচুরি
সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় এক সময় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল অসংখ্য পাহাড় ও টিলা। অনেক জায়গায়ই পাহাড় টিলার সেই দৃশ্য এখন আর নেই। নির্বিচারে টিলা কেটে সাবাড় করে ফেলছে প্রভাবশালীরা। পরিবেশ অধিদপ্তর যেন নাখে সুরেশ সরিষার তেল লাগিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। মিডিয়ায় খবর ছাপা হলে মাঝে মধ্যে নামকা ওয়াস্তে অভিযান চালালেও কার্যত টিলা কাটা থামছে না।
বিশিষ্টজনের দাবি- সিলেট নগরীর পরিধি বাড়ায় টিলা কাটায় নতুন মাত্রা পেয়েছে। শীত, বর্ষা সব মৌসুমেই চলছে টিলা কাটা। দেখা গিয়েছে মাটি কাটার পর টিলা যখন অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যায়, তখন অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। অন্যদিকে পরিবেশবাদীরা বলছেন,- দিন দিন মানবসৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। গত বর্ষা মৌসুমে এ ধরনের সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে সিলেটবাসীকে। যেখানে এক মাসে পৃথক টিলা ধ্বসে পাঁচজনের প্রাণহানি ঘটেছিল।
সরেজমিনে দেখা গিয়েছে- নগরীর বালুচর, মলাইটিলা, ব্রাহ্মণশাসন, হাওলদারপাড়া, খাদিমপাড়া, মেজরটিলা, দুসকি, টিলারগাঁও, খাদিমনগর, খাদিমপাড়া, গুয়াবাড়ী, জাহাঙ্গীরনগর, আখালিয়া বড়গুল এলাকার মুক্তিযোদ্ধা টিলা, নালিয়া, সাহেববাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় টিলা কাটা চলছে অহরহ। কোথাও প্রকাশ্যে আবার কোথাও রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে এসব টিলা।
চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে টিলা কাটার ফলে অনেক টিলা ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় টিলা ধ্বসের ঘটনায় প্রাণহানিও ঘটেছে। এবার টিলা কাটায় বাধা দেওয়ায় প্রকাশ্যে খুন হলেন বাধাপ্রদানকারী।
এবিষয়ে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর এর পরিচালক ইমরান চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ প্রতিবেদকের মূল প্রশ্ন এড়িয়ে জানান আমি দুই মাস ধরে ঢাকা লঙ ট্রেনিংয়ে আছি।
মামলা নিয়ে লুকোচুরিঃ নিহত আশিক মিয়ার ভাই গতকালই তড়িগড়ি করে নিহতের স্ত্রীকে না জানিয়ে শাহপরান (রঃ) থানায় ৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন সেখান থেকে বাদ যায় ঘটনার সেল্টারদাতা ও পুলিশ সদস্য পরিচয়দানকারী খোরশেদ এর সহযোগী রায়হান হোসেন মান্না, ও জনি মিয়ার নাম।
নিহত আশিক মিয়ার স্ত্রীর দাবী উনার দেবর থাকেন ঘটনার স্থান থেকে বহু দূরে উনি তাই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত দুইজনকে বাদ দিয়ে মামলা করেছেন অথচ আমরা ৫ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দিলে থানা মামলা নেয়নি, আমি প্রয়োজনে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যাব, সেখানেও আমাদের আবেদনপত্র গ্রহণ না করলে কোর্টে যাব তারপরও আমার স্বামী হত্যার জন্য দায়ীদের ছাড় দেবনা।
এবিষয়ে শাহপরান থানার অফিসার্চ ইনচার্জকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন ব্যস্ত আছেন পরে কথা বলব মামলার বিষয়ে আলাপ পরে করবেন।
সিলেটে টিলাকাটার বিরোধে প্রাণ হারালেন আশিক, মামলা নিয়ে লুকোচুরি