শ্রমিক নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
মো. শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রাম পটিয়া অটো টেম্পো, টেক্সি ও সিএনজি শ্রমিক কল্যাণ সমবায় সমিতি লি. অর্থ সম্পাদক হাজী আব্দুল মান্নান কিশোরগ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়ায় পরিবারবর্গের আয়োজনে পটিয়ায় দুটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারী) চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলা পৌরসভা শ্রমিকলীগ, কলেজ রোড মার্কেট কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৩০ জানুয়ারি ২০২৩ দুপুর ১ টায় পটিয়া পৌরসভা ডাকবাংলোর মোড়ে পটিয়া পৌরসভা সিএনজি স্ট্যান্ডের ইজারাদার হাজী আবদুল মন্নানকে প্রকাশ্যে হত্যা ও পটিয়া অটো টেম্পো টেক্সি ও সিএনজি শ্রমিক কল্যাণ সমবায় সমিতি লিঃ এর অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ বদিউল আলমের উপর কিশোর গ্যাং লিডার ওমর আলী ও তার পুত্রসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর ধারাল ছুরি ধারা প্রাণঘাতি নৃশংস হামলার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
পটিয়া পৌরসভা শ্রমিকলীগের সাবেক ও পটিয়া অটো টেম্পো টেক্সি ও সিএনজি শ্রমিক কল্যাণ সমবায় সমিতি লি. এর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, একটি মাফিয়া চক্রের সরাসরি ইন্ধনে পটিয়ায় কিশোর গ্যাং এর ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্ট হয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী যেখানে অপরাধ জঙ্গি দমনে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করছে সেখানে পটিয়ায় প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর গ্যাং লিডারদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে।
তিনি আরো বলেন, পটিয়ায় রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে কিশোর গ্যাং লিডাররা আমাদের সাধারন সিএনজি চালক শ্রমিকদের জিম্মি করে চাঁদাবাজী করে যাচ্ছে। সারাদিন সিএনজি নিয়ে ঘুরে রাত হলে নির্জন স্থানে নিয়ে হামলা করছে এমনকি হত্যাও করছে। তবে পুলিশ প্রশাসনসহ একটি মাফিয়া চক্রের ইন্ধনে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে। এতে দিন দিন পটিয়ার পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে।
শ্রমিক নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
খোরশেদ আলম বলেন, ২০২০ সালে সিএনজি স্টেশন থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে মিলিটারী পুলে নিয়ে আমাদের একজন শ্রমিককে হত্যা করা হয় তার বিচার হয়নি, চাঁদাবাজিকে কে কেন্দ্র করে এর আগে ৮ টি গাড়ি ভাঙ্গচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবুও পটিয়া প্রশাসন নিবর ভূমিকায় রয়েছে। সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ কোন বিচার পায় না এই থানা পুলিশ প্রশাসন কাছ থেকে। গত ৩০ জানুয়ারির দিনে দুপুরে এই ঘটনার পর শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারী) আমাদের ভাই ইজারাদার আব্দুল মন্নান মারাগেলেও পুলিশ প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি এবং কি মৃতের পরিবারের কাছ থেকে হত্যা মামলাও নেয়নি। আমরা তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেফতার করা না হলে প্রয়োজনে আমরা পটিয়ায় ধর্মঘটসহ বৃহত্তর কর্মসূচির ঘোষনা দিবো।
সমাপনি বক্তব্যে বর্তমান পটিয়া অটো টেম্পো টেক্সি ও সিএনজি শ্রমিক কল্যাণ সমবায় সমিতি লিঃ এর সভাপতি জামশেদুল হক বলেন, কিশোর গ্যাং লিডার ও তাদের সদস্যরা পটিয়ায় রাজনীতির আড়ালে সন্ত্রাসী রাজস্ব কায়েম করছে যার পেছনে পুলিশ প্রশাসন জড়িত।
পুলিশের নাকের ডগায় পটিয়াতে চাঁদাবাজি, চুরি- ছিনতাই, ভূমিদখল, হত্যাসহ নানান অপরাধ করে বেড়াচ্ছে এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এতে আমরা উদ্বিগ্ন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের লাইনম্যান ছবুর, সুমনকে প্রকাশ্যে চাঁদা দাবীতে হামলা ও হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে আমরা তার কোন সুষ্ঠু বিচার পাইনি। আব্দুল গফুর হত্যার ও কোন সুষ্ঠু বিচার পাইনি। তাহলে কি এখান কার প্রশাসন বিক্রি হয়ে গেছে? তবে এইবার আমাদের এক ভাইকে আবদুল মন্নানকে হত্যার ও আরেক ভাই বদিউল আলমের উপর নৃশংস হামলা ও হত্যার বিচার না পেলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলন যেতে বাধ্য হবো।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পটিয়া উপজেলা আওয়ামী যুবলীগ নেতা আরিফুর রহমান বলেন, আমরা পটিয়াবাসী কোনদিন অন্যায়ের সাথে আপোষ করিনি এখনো করবো না। নিরিহ খেটে খাওয়া মানুষের উপর হামলা হবে তা আমরা মেনে নিবো না। ইজারাদার মৃত আব্দুল মন্নান ও মোহাম্মদ বদিউল আলমের উপর হামলা কারীদের আমরা দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
শ্রমিক নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
এদিকে কিশোর গ্যাং লিডার ওমর আলী ও তার পুত্র সোহেল এবং তাদের সহযোগীদের ছুরিকাঘাতে নিহত ইজারাদার হাজী আবদুল মন্নানের হত্যার কারীদের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার ও ফাঁসির দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে তার ছেলে মাঈন উদ্দিন বলেন,, সাংবাদিকরা জাতীর বিবেক। আমরা চাই আপনারা আমাদের ন্যা্য্য বিচার পেতে সহায়তা করুন। আমার পিতা করোনা কালে দেশে চলে এসে পটিয়া টেক্সি স্ট্যান্ড ইজারা নিয়ে ব্যবসা করে। তবে, কিশোর গ্যাং লিডাররা চাঁদা দাবীতে দীর্ঘদিন তাকে নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল এতে তিনি আমাদের নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। গত ৩০ জানুয়ারী চাঁদা না দেওয়ায় প্রকাশ্য দিবালোকে কিশোর গ্যাং লিডার ও সহযোগীদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে আমার পিতা রক্তাক্ত ও জখম হয়। এরপর তাকে পটিয়া হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন।সেখানে তিনি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গত ৩ জানুয়ারি মৃত্যু বরন করেন।
তিনি বলেন, আমার বাবার উপর হামলাকারীরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমাদের এখনো হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে আমরা বারবার থানায় গিয়েও পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে কোন প্রকার সহায়তা পাইনি। আমরা মামলা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।আমরা চাই যাতে আর কোন মায়ের বুক খালি না হয়। আমরা আমাদের পরিবারের সুরক্ষা চাই। আমার পিতার হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে তাদের ফাঁসি চাই।
এসময় সংবাদ সম্মেলনটিতে বক্তব্য রাখেন- পটিয়া অটো টেম্পো টেক্সি ও সিএনজি শ্রমিক কল্যাণ সমবায় সমিতি লিঃ সমিতির উপদেষ্টা বেনজির উদ্দিন, সহ- সভাপতি মো. ইলিয়াস, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ হারুন, মো. আকতার হোসেন, মোস্তফা কামাল, আবদুল করিম, মো. মাসুদ, বোরহান উদ্দিন, আলী আজম, আলমগীরসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিগণ।